সংবাদ

সৌদিতে চাঁদ দেখা গেছে, ঈদুল আজহার তারিখ ঘোষণা

সৌদি আরবের আকাশে আজ (রোববার) ইসলামি ক্যালেন্ডারের বারোতম মাস পবিত্র জিলহজের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে দেশটিতে আগামী ২৮ জুন (বুধবার) পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করা হবে।

রোববার সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্থানীয় গণমাধ্যম খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জিলহজের চাঁদ ওঠায় আগামী ২৭ জুন সৌদিতে পবিত্র আরাফাহ দিবস ও ২৮ জুন ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।

[quads id=1]

আজ থেকে প্রায় ১৫ শ বছর আগে সৌদি আরব থেকেই উত্থান ঘটেছিল ইসলাম ধর্মের, বর্তমানে যা বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলোর একটি। ইসলাম ধর্মে এই দিনটি হজের শেষ দিন হিসেবে পালন করা হয়। এই দিন আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় গরু, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, উট প্রভৃতি কোরবানি করেন সামর্থ্যবান মুসলিমরা।

পবিত্র ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি হজ। প্রত্যেক বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ সামর্থ্যবান মুসলিম সৌদি আরবের মক্কায় হজ পালন করতে যান।

পবিত্র ঈদুল আজহা; আর মাত্র কিছুদিন পরেই পালিত হবে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসব। তবে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও কোন তারিখে বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশে পালিত হবে ঈদুল আজহা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। যদিও পবিত্র ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছে আরব আমিরাত। 

আরব আমিরাতের জ্যোতির্বিদরা জানিয়েছেন বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলিম দেশ আগামী ১৮ জুন জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার চেষ্টা করবে। এদিন আরবি বছরের ১১তম মাস জিলকদের ২৯তম দিন থাকবে।

খালিজ টাইমমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ১৮ জুন জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার বিষয়টি কষ্টসাধ্য হবে। বিশেষ করে ইসলামিক বিশ্বের মধ্যাঞ্চলীয় ও পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশগুলোতে খালি চোখ এবং টেলিস্কোপ দিয়ে চাঁদ দেখাও কঠিন হবে।

[quads id=1]

তবে জ্যোতির্বিদদের গণনা অনুযায়ী, বিশ্বের অনেক দেশে ১৯ জুনকে জিলহজ মাসের প্রথম দিন হিসেবে ধরা হবে। ফলে আশা করা হচ্ছে ২৭ জুন পবিত্র আরাফাতের দিন হবে এবং ২৮ জুন ঈদুল আজহা পালিত হবে।

১৮ জুন আরব ও মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর বড় শহরে চাঁদ দেখার সম্ভাবনা কেমন থাকবে সেটিও জানিয়েছেন জ্যোতির্বিদরা।

জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া
আগামী ১৮ জুন জাকার্তায় সূর্যাস্তের ৭ মিনিট পর চাঁদও অস্ত যাবে। তখন চাঁদের বয়স থাকবে সাড়ে ৬ ঘণ্টা। ফলে টেলিস্কোপ দিয়েও এদিন জাকার্তায় চাঁদ দেখা যাবে না।

সূর্যাস্তের ২৯ মিনিট পর আবুধাবির আকাশে চাঁদ অস্ত যাবে। তখন এটির বয়স থাকবে ১২ দশমিক ৪ ঘণ্টা। জাকার্তার মতো আবুধাবিতেও টেলিস্কোপ দিয়ে চাঁদ দেখা যাবে না।

রিয়াদ, সৌদি আরব
সৌদির রাজধানী রিয়াদে সূর্যাস্তের ৩১ মিনিট পর চাঁদ ডুবে যাবে। তখন চাঁদটির বয়স থাকবে ১৩ ঘণ্টা। তবে টেলিস্কোপের মাধ্যমে আকাশ পুরোপুরি পরিষ্কার থাকা সাপেক্ষে চাঁদ দেখা যেতে পারে।

জেরুজালেম, ফিলিস্তিন

সূর্যাস্তের ৩৭ মিনিট পর জেরুজালেমে চাঁদ অস্ত যাবে। এটির বয়স থাকবে ১৩ দশমিক ৮ ঘণ্টা। তবে টেলিস্কোপেও এ শহরে চাঁদ দেখা কঠিন হবে।

[quads id=1]

কায়রো, মিসর
আফ্রিকার দেশ মিসরের রাজধানী কায়রোতে আগামী ১৮ জুন সূর্যাস্তের ৩৬ মিনিট পর চাঁদও মিলিয়ে যাবে। তখন এটির বয়স থাকবে ১৪ ঘণ্টা। জেরুজালেমের মতো কায়রোতেও চাঁদ দেখার জন্য টেলিস্কোপ এবং পরিষ্কার আকাশের প্রয়োজন হবে।

রাবাত, মরক্কো
রাবাতে সূর্যাস্তের ৪৪ মিনিট পর চাঁদ অস্ত যাবে। চাঁদটির বয়স তখন থাকবে ১৬ ঘণ্টা ২ মিনিট। রাবাতে টেলিস্কোপ দিয়ে সহজেই চাঁদ দেখার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা কবে?
সারাবিশ্বের মুসলিমদের ন্যায় বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও অপেক্ষায় আছেন খোদার রাহে কোরবানি দেয়ার এই উৎসব দিনের জন্য। সাধারণত, বাংলাদেশে আরব বিশ্বগুলো ঈদ পালনের পরবর্তী দিনেই ঈদ পালন করা হয়ে থাকে। সে হিসাবে ২৮ জুন যদি আরব বিশ্বে ঈদ পালিত হয় তাহলে বাংলাদেশে এর পরের দিন অর্থাৎ ২৯ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করা হবে।

বাংলাদেশে সরকারিভাবে ২৮ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারি ছুটি থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ছুটির সঠিক তারিখ পরিবর্তন হতে পারে।

[quads id=1]

ঈদুল আজহা কেন পালন করা হয়?
ঈদুল আযহা হল নবী ইব্রাহীমকে আল্লাহ যা করতে বলেছিলেন তা শোনার জন্য তার ইচ্ছুকতাকে সম্মান করার একটি উদযাপন।

জনশ্রুতি আছে, প্রাক ইসলাম যুগের নবী ইব্রাহীম আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আল্লাহ স্বপ্নে তাঁর সবথেকে প্রিয় বস্তুটি (তাঁর শিশু পুত্র সন্তান) আল্লাহর নামে কোরবানির আদেশ দেন। সেই আদেশ পাওয়ার পর নবী ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহকে খুশি করার জন্য তাঁর সবথেকে প্রিয় শিশুপুত্রকে তরবারি তলায় রেখে কোরবানি করেন। কিন্তু ঘটনা ক্রমে সেখানে অলৌকিকভাবে একটি দুম্বা কোরবানি হয়।

মূলত আল্লাহ সেদিন ইব্রাহীমের উপর কঠিন একটি পরীক্ষা নিয়েছিলেন এবং সেই পরীক্ষায় ইব্রাহীম (আ.) সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সেই দিনটিকে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ হিসেবে সে সময় থেকে পালন করে আসছেন ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা।

ইসলাম ধর্মে কোরবানির তাৎপর্য 
উপরে উল্লিখিত কোরবানি ও ইব্রাহীক (আ.) এর ঘটনা থেকেই সহজে বুঝা যায় ইসলাম ধর্মে কোরবানির তাৎপর্য। কোরবানি নিয়ে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু আয়াত সংযুক্ত করা হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন-  আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে কোরবানিকে ইবাদতের অংশ করেছি।  যাতে জীবনোপকরণ হিসেবে যে গবাদি পশু তাদেরকে দেয়া হয়েছে, তা জবাই করার সময় তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে আর সব সময় যেন মনে রাখে একমাত্র আল্লাহই তাদের উপাস্য। অতএব তাঁর কাছেই পুরোপুরি সমর্পিত হও। আর সুসংবাদ দাও সমর্পিত বিনয়াবনতদের, আল্লাহর নাম নেয়া হলেই যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, যারা বিপদে ধৈর্যধারণ করে, নামাজ কায়েম করে আর আমার প্রদত্ত জীবনোপকরণ থেকে দান করে। (সূরা হজ, আয়াত ৩৪-৩৫)

ঈদুল আজহা ও পবিত্র হজের সম্পর্ক 
পবিত্র কোরবানির ঈদ বা ঈদুল আজহার সাথে পবিত্র হজ পালনের কী সম্পর্ক তা অনেকেই জানেন না। হজ ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি স্তম্ভ। ঈদুল আজহা- যার অর্থ ‘ত্যাগের উৎসব’। ঈদুল ফিতরের ঠিক দুই মাস পরে উদযাপিত হয় এই উৎসবটি। একই সময়ে যখন অনেক মুসলমান হজ যাত্রা করে ।

পবিত্র হজের সমাপ্তির সময় উদযাপিত হয় কোরবানির ঈদ। তাছাড়া কোরবানিও হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। প্রতিবছর সৌদি আরবের মক্কায় বার্ষিক হজ এবং কোরাবানি এই দুই উৎসব একত্রিত হয়ে মুসলিম বিশ্বের এক অভূতপূর্ব মিলন সমাবেশ ঘটায়।

হজ হল জীবনে অন্তত একবারের একটি ক্রিয়াকলাপ যা তাদের জন্য একটি কর্তব্য যারা এটি বহন করতে পারে এবং যারা ইতিমধ্যে এটি সম্পাদন করেনি। ঈদ-উল-আযহা একটি বার্ষিক কার্যকলাপ যা সকলের দ্বারা উদযাপন করা হয়।

[quads id=1]

পশু কোরবানি না নফসের কোরবানি? 

ইসলাম ধর্মে পশু কোরবানি নিয়ে প্রতিবছর কোরবানির ঈদের আগেই সপ্তাহব্যাপী পশুর হাট বসে দেশের প্রায় সব জেলায়। এসব হাট থেকে পশু কিনে নিয়ে কোরবানি দেন মুসলমানরা। তবে হাট থেকে পশু কিনে কোরবানি দিলেও অনেকেই নিজের নফসের কোরবানি দিতে পারেন না।

নফসের কোরবানি মানে হলো নিজের দুশ্চরিত্র বা খারাপ মনোভাবনা, বাসনা, ইচ্ছার কোরবানি দেয়া বা আত্মশুদ্ধির পথে আসা। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যা খুবই গুরুত্ববহ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বেশিরভাগ মানুষই কোরবানি দিতে গিয়ে সওয়াব লাভের বদলে শিরকের ভাগীদার হচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button