কেয়ামতের পূর্বনিদর্শন ‘আল-ওয়াহান’
কেয়ামত মুমিনের বিশ্বাসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে কেয়ামত কবে হবে— এই বিষয়ে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। কুরআন পাকে ইরশাদ হয়েছে, কিয়ামতের জ্ঞান কেবল তাঁরই (আল্লাহর) নিকট। তাঁর জ্ঞানের বাইরে কোনো ফল আবরণমুক্ত হয় না এবং কোনো নারী সন্তান প্রসব ও গর্ভধারণ করে না। (সুরা হামিম-আস-সাজদাহ, আয়াত : ৪৭)
কোরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘তারা জিজ্ঞাসা করে কেয়ামত কখন হবে? আপনি বলে দিন, এর খবর তো আপনার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে তিনি তা স্পষ্টভাবে দেখাবেন।’ (সুরা আল-আরাফ, আয়াত : ১৮৭)
একবার আল্লাহর ফেরেশতা হযরত জীবরাঈল (আ.) ছদ্মবেশে শেষনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে এসে কয়েকটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। এরপর তিনি বললেন, কেয়ামত কখন হবে? আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে অধিক জ্ঞাত নয়।’ এর থেকে বোঝা যায়, কিয়ামতের জ্ঞান রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও জানতেন না। এর জ্ঞান একমাত্র মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার কাছেই রয়েছে। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাৎক্ষণিকভাবে কিয়ামতের পূর্বনিদর্শন সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘যখন দাসী তার মুনিবকে জন্ম দেবে এবং নগ্নপদের রাখালরা উঁচু অট্টালিকা তৈরি করে গর্ব করবে— তখন কেয়ামত হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ০৮)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘গোপন বিষয় পাঁচটি- ১. কেয়ামত, তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। ২. আগামী দিন কি ঘটবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। ৩. কখন বৃষ্টি হবে, তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। ৪. কার কোথায় মৃত্যু হবে, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। ৫. কে কতটুকু রিযক পাবে, তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০৩৯)
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘শিগগির মানুষ তোমাদের আক্রমণ করার জন্য একে অপরকে আহ্বান করতে থাকবে, যেভাবে মানুষ তাদের সঙ্গে খাবার খাওয়ার জন্য একে অপরকে আহ্বান করে।’ জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! তখন কি আমরা সংখ্যায় কম থাকবো।’ তিনি বললেন, ‘না, বরং তোমরা সংখ্যায় হবে অগণিত। কিন্তু তোমরা সমুদ্রের ফেনার মতো হবে, যাকে সহজেই সমুদ্রের স্রোত বয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা তোমাদের শত্রুর অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দেবেন এবং তোমাদের অন্তরে আল-ওয়াহান ঢুকিয়ে দেওয়া হবে।’ জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আল-ওয়াহান কি?’ রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল-ওয়াহান হলো- দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৭৫৩৯)
এই হাদিসের সঙ্গে সমগ্র বিশ্বের নিপীড়িত মুসলিম উম্মাহের অবস্থা দেখলে দেখা যায়, কেয়ামত খুব কাছে রয়েছে। আমরা শেষ জমানায় অবস্থান করছি। আর কিয়ামতের পূর্বনিদর্শনগুলো বাস্তবায়িত হতে দেখলে ঈমান দৃঢ় হয়। গত শতাব্দীতে দেখা গেছে- বিধর্মীরা মুসলিমদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকে— হত্যা ও রাষ্ট্র দখলের জন্য। পাশাপাশি মুসলিমরাও পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে রক্তপাত ঘটাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কারো কারো জন্য দ্বীনের ওপর অটল, অবিচল থাকা কঠিন হয়ে উঠেছে। ঠিক এমনটিই আভাস দিয়েছেন রাসুল (সা.)। তিনি বলেছেন—
এমন এক জমানা আসবে যখন দ্বীনের ওপর অবিচল থাকা হাতের মধ্যে জ্বলন্ত অঙ্গার রাখার ন্যায় কঠিন হবে।
(তিরমিজি, হাদিস : ২২৬০)
আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে দ্বীন মেনে চলার তাওফিক দান করুন।