হুমা কুরায়েশির জন্যে সোহেল-সীমার ২৪ বছরের সংসারের ভাঙ্গন!
ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল ফ্যাশন জগতে কাজ করার। স্বপ্নপূরণের জন্য দিল্লি ছেড়ে মুম্বাইয়ে পা রেখেছিলেন সীমা সাজদে। কিন্তু মুম্বাই শহর শুধুমাত্র তার কর্মজীবনে সাফল্য আনেনি, তার সঙ্গে এনে দিয়েছিল সীমার জীবনের ভালবাসাকেও। কিন্তু সেই ভালবাসাই তার জীবন থেকে উধাও হয়ে যায় অন্য এক তারকার জন্য।
১৯৭৬ সালে ৮ মার্চ দিল্লিতে জন্ম সীমার। বাবা-মা ও ভাই-বোনের সঙ্গে দিল্লিতে থাকতেন তিনি। সীমার বাবা একটি বিনোদন সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন। শৈশব থেকেই ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল সীমার।
চাঙ্কি পাণ্ডে সম্পর্কে সীমার চাচা হন। মুম্বাইয়ে এসে চাচার বাড়িতেই ওঠেন সীমা। ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনার পর চাঙ্কির সঙ্গে বলিপাড়ার বিভিন্ন পার্টিতে কস্টিউম ডিজাইনিং সংক্রান্ত কাজ খোঁজার জন্য যেতেন তিনি।
চাঙ্কির সঙ্গে ভাবনার আংটিবদলের অনুষ্ঠানের সময় নামকরা বলি তারকাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সালমান খানের ভাই সোহেলও। তখনও ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেননি সোহেল। প্রথম দেখাতেই সীমার প্রেমে পড়ে যান তিনি। সীমার সঙ্গে প্রথম আলাপ সম্পর্কে গড়াতে বেশি সময় নেয়নি।
খান পরিবারের সদস্যরা তাদের কাছের বন্ধুবান্ধবদের মাঝেমধ্যেই নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানাতেন। সোহেলও সেই উপলক্ষে এক দিন সীমাকে আমন্ত্রণ জানান। পরিবারের সকলের সঙ্গে, বিশেষ করে সোহেলের ভাইবোনদের সঙ্গে ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায় সীমার। কিন্তু সীমার সঙ্গে সোহেলের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে আপত্তি জানায় খান পরিবার।
সীমা ভিন্ন ধর্মের, তার উপর আবার ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত। খান পরিবারের সদস্য ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত হলেও তারা চাইতেন না যে, সোহেল তার জীবনসঙ্গী হিসাবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির কাউকে পছন্দ করুন। তাই সীমার সঙ্গে সোহেলের মেলামেশা বন্ধ করে দিয়েছিলেন খান পরিবারের সদস্যরা। দেখা করতে দেওয়া তো দূরের কথা, সীমার সঙ্গে কথা বলতেও বাধা দিতেন সোহেলকে।
সোহেল তখন তার প্রথম ছবি মুক্তির অপেক্ষায়। ‘প্যার কিয়া তো ডরনা কিয়া’ ছবির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ছবি মুক্তির আগের রাতে সীমাকে নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। মধ্যরাতে সীমাকে নিয়ে সোজা নিজেদের বাড়িতে আসেন সোহেল। বাড়ির সবাই তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওই বাড়ির কাজের লোক সীমাকে সঙ্গে নিয়ে সোহেলের বাড়ি আসার খবর গিয়ে জানান সোহেলের বাবা সেলিম খানকে।
সেলিম স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, সীমাকে তিনি বাড়ির অন্দরমহলে রাখতে রাজি নন। সেই মুহূর্তে সালমানকে নিয়ে বলিপাড়ায় নানা রকম আলোচনা চলছে। সেলিম চাননি যে, ক্যারিয়ার শুরু হওয়ার আগে সোহেলও কোনো রকম বিতর্কে জড়িয়ে পড়ুন।
কিন্তু সোহেল যে সীমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন না, তা-ও জানিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত সেলিম সিদ্ধান্ত নেন, সীমাকে বিয়ে করলেই একমাত্র তার এই বাড়িতে ঠাঁই হবে। নচেৎ সীমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতে হবে। বাবার কথা শোনামাত্রই সোহেল তার বন্ধুবান্ধবদের ডেকে বিয়ের আয়োজন করা শুরু করেন। সোহেলের বাড়ির কাছেই একটি মসজিদ ছিল। কিন্তু বিয়ে দেওয়ার জন্য কোনও মৌলবি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। সোহেলের বন্ধুরা এক মৌলবিকে উঠিয়ে করে নিয়ে আসেন।
মৌলবি প্রথমে ভয় পেলেও পরে যখন দেখতে পান যে তিনি খান পরিবারের বিয়ে দিতে চলেছেন, তখন তিনি আর আপত্তি জানাননি। ১৯৯৮ সালে বাড়ির লোকজন ও কাছের বন্ধুবান্ধবদের নিয়েই চারহাত এক হয় সোহেল ও সীমার।
প্রথম ছবি মুক্তির আগেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সোহেল। বলিপাড়ার একাংশের দাবি, ‘প্যার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া’ ছবির নামকরণ সার্থক করতেই নাকি বিয়ে করেছিলেন অভিনেতা। পরে অবশ্য ধুমধাম করে বিয়ে করেছিলেন তারা। বিয়ের পর নিজের ক্যারিয়ারেও এগিয়ে গিয়েছিলেন সীমা। মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় নিজস্ব পোশাকের একটি সংস্থা খোলেন তিনি। এমনকি, দুবাইয়েও তার সংস্থার দোকান খুলে ফেলেন সীমা।
শিল্পা শেট্টি, কারিনা কাপুর খান, মালাইকা আরোরা, ক্যাটরিনা কাইফের মতো নামী তারকাদের পোশাক ডিজাইন করেন সীমা। সীমাকে বেশির ভাগ সময় ভাবনা পাণ্ডে, মাহীপ কাপুর, নীলাম কোঠারির সঙ্গে পার্টি করতে দেখা যায়। তারা ৪ জন একে অপরের কাছের বন্ধু।
বিয়ের দু’বছর পর পুত্রসন্তানের জন্ম দেন সীমা। তার ঠিক এক বছর পর সারোগেসির মাধ্যমে দ্বিতীয় পুত্রসন্তান কোলে আসে সীমার। সোহেল ও সীমাকে নিয়ে বলিপাড়ায় নিয়মিত আলোচনা হত। অনেকে তাদের বলিপাড়ার শ্রেষ্ঠ জুটির তকমাও দিয়েছিলেন।
কিন্তু ২০১৭ সাল নাগাদ বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে যে, সোহেল ও সীমা এক ছাদের তলায় থাকছেন না। এই জুটির মধ্যে চিড় ধরিয়েছেন আবার বলিপাড়ার এক তারকা। হুমা কুরায়েশির সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন সোহেল, বলিপাড়ায় এই নিয়ে শোরগোল শুরু হয়।
‘সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ’ ব্র্যান্ড প্রচারের প্রধান মুখ ছিলেন হুমা। সোহেলও তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই সূত্রে সোহেলের সঙ্গে হুমার আলাপ। কোনো পার্টির আয়োজন করা হলে সেখানে হুমাকে ডাকতেন সোহেল। কানাঘুষা শোনা যায় যে, সোহেলের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য সোহেলের বাড়ির কাছাকাছি একটি ফ্ল্যাটও কিনেছিলেন হুমা।
কিন্তু সোহেল ও হুমার মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল না। সবই নাকি মিথ্যা খবর রটানো হয়েছে বলে দাবি করেন হুমা। এই প্রসঙ্গে সীমার বক্তব্য, হুমার সঙ্গে সোহেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। পার্টিতে হুমা ছাড়াও আরও ৫০০ জন উপস্থিত থাকতেন। এ সবই মিথ্যা।
তবে, ২০২০ সালে নেটফ্লিক্সে ‘দ্য ফ্যাবুলাস লাইভস অব বলিউড ওয়াইভস’ সিরিজে সীমা তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মুখ খোলেন। তিনি জানান যে, সোহেল তার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন। সীমা তার দুই ছেলেকে নিয়ে আলাদা বাড়িতে থাকেন। যদিও তাদের বাড়ির দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়।
সীমা বলেন, মাঝে মাঝে মনে হয় আমি সাত সমুদ্রতীরে কোথাও থাকি। নির্বাণ সারা দিন ওর বাবার সঙ্গে থাকে। শুধুমাত্র রাতে ঘুমোনোর সময় আমার কাছে আসে। নির্বাণের এই স্বভাব আমার একদম পছন্দ নয়।
শোনা যায়, সোহেল ও সীমার সংসার জোড়া লাগানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন সালমান। মালাইকা ও আরবাজের বিবাহবিচ্ছেদের পর সালমান চাইছিলেন যে, সোহেল ও সীমার সম্পর্ক টিকে থাকুক।
অনেকের মতে, তাদের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যেই। যদিও সোহেল বা সীমা এ নিয়ে কিছু স্বীকার করেননি। কিন্তু ২৪ বছরের বিবাহিত জীবনে যে চিড় ধরে যায় এবং সংসার ভাঙে, তা স্পষ্ট। সীমা এক সাক্ষাৎকারে জানান যে, পাঁচ বছর ধরে সোহেল ও সীমা আলাদা রয়েছেন। তাদের চিন্তাভাবনা এক ধরনের নয় বলেই আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। সোহেল ও সীমা দু’জনেই নিজেদের ক্যারিয়ারে সফল হলেও এক ছাদের তলায় থাকতে ব্যর্থ এই জুটি।