হার্ট অ্যাটাক হলে করণীয় কি?

বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ হলো হার্ট অ্যাটাক। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর থেকে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। তবে ১৮ বছর বয়সেও অনেকের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার নজির রয়েছে।

সাধারণত মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকে বেশি থাকে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার লিপিডেমিয়া থাকলে, বংশে কার হার্ট অ্যটাক হলে, ধূমপান, মদ্যপানের অভ্যাস, স্থূলতা বা মুটিয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত মানসিক চাপ হার্ট অ্যাটাকের বড় কারণ।

কারও হার্ট অ্যাটাক হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া গেলে অনেক ক্ষেত্রে বিপদ এড়ানো সম্ভব হবে।

হার্ট অ্যাটাকের পর অনেক সময় এমন পরিস্থিতি হয় যে এটি সামান্য লড়াই করার সুযোগও দেয় না। এ ক্ষেত্রে বেঁচে থাকার হার ১২ শতাংশেরও কম বলে মনে করা হয়। তবে এ পরিস্থিতিতে সিপিআর অনেকের জন্য কার্যকরী হতে পারে। এটি রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

সিপিআর হলো একটি প্রাথমিক চিকিৎসা; যার মাধ্যমে একজন হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচিয়ে তোলা যায়। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সময় হাতে পাওয়া যায়। তবে এর জন্য় প্রশিক্ষণ দরকার। এটি সঠিকভাবে প্রয়োগের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

যেভাবে সিপিআর প্রয়োগ করবেন
সবার উচিৎ সিপিআর সম্পর্কে ধারণা রাখা। আগে থেকে জানা থাকলে যে কেউ-ই সিপিআর প্রয়োগ করতে পারবেন। অল্প সময়ের মধ্যে কারও জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারবেন। প্রথমেই কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে চিৎকার দিয়ে অন্য কারো সাহায্য চাইতে হবে। দু’জন হলে সহজে কাজগুলো করা যাবে।

১. প্রথমেই আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশের অবস্থা দেখে নিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশে কিছু থাকলে তা সরিয়ে নিতে হবে।

২. এরপর দেখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান আছে কি না। জ্ঞান থাকলে তাকে স্বাভাবিকভাবে চিৎ করে শুইয়ে দিতে হবে। যাতে তিনি ধীরস্থিরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারেন।

৩. জ্ঞান না থাকলে তার শ্বাস নেওয়ার পথ যেমন- নাক, মুখ ও গলার ভেতরের অংশ পরিষ্কার আছে কি না দেখতে হবে। তার মাথা পেছনের দিকে টেনে, চিবুক ওপরের দিকে তুলে শ্বাসনালি খুলে দিতে হবে। যদি কফ-রক্ত বা অন্য কোনো কিছু এপথে আটকে থাকে, তবে তা সরিয়ে শ্বাস নেয়ার পথ করে দিতে হবে এবং সিপিআর প্রয়োগ শুরু করতে হবে।

৪. ব্যক্তির বুক বরাবর বসে এক হাতের তালুকে বুকের মাঝ বরাবর ও একটু বামদিকে স্থাপন করতে হবে। তার ওপর অপর হাত স্থাপন করে ওপরের হাতের আঙুল দিয়ে নিচের হাত আঁকড়ে ধরতে হবে। হাতের কনুই ভাঁজ না করে সোজাভাবে বুকের ওপর চাপ দিতে হবে।

৫. এমন গতিতে চাপ প্রয়োগ করতে হবে যেন প্রতি মিনিটে ১০০-১২০টি চাপ প্রয়োগ করা যায়। এভাবে প্রতি ৩০টি চাপ প্রয়োগের পর আক্রান্তের মুখে মুখ রেখে দু’বার ফুঁ দিতে হবে। এটাকে বলে রেসকিউ ব্রেথ। এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে যেন বুকের পাঁজর ২ থেকে ২.৫ ইঞ্চি নিচে নামে। যাতে চাপ হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ পড়ে।

৬. হাসপাতালে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত বা জ্ঞান ফিরে আসা অথবা স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হওয়া পর্যন্ত একইভাবে সিপিআর চালিয়ে যেতে হবে।

৭. জ্ঞান ফিরলে বা শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হলে তাকে একপাশে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে। এর পর হাসপাতালে নিয়ে পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

CPR লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলে অনেক ভিডিও পাওয়া যায় সেগুলো দেখেও এই সহজ অথচ জরুরি কাজটি শিখে নিতে পারেন। জানা থাকলে ভবিষ্যতে আশেপাশের কারো জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারবেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : হার্ট সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হচ্ছে মনে করলে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *