নিখুঁত সিভি লেখার কৌশল জেনে নিন
সরকারি বেসরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এখনই আবেদন করুন। প্রয়োজন হবে ভালো একটি সিভি। জেনে নিতে পারেন নিখুঁত সিভি লেখার কৌশল।
এক নজরে দেখে নিন
মনে রাখবেন যার সিভি ফরমেট যত ভালো, তিনি তত এগিয়ে থাকেন। আমাদের অনেকেরই সিভি রয়েছে। তবে তা কতটা ঠিক কিংবা ভুল তা আমরা নিখুঁত সিভি লেখার কৌশলঅনেকেই জানি না। সিভির দরকারি বিষয় বাদ দিয়ে অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছুই সিভিতে যুক্ত করি।
নিখুঁত, সুন্দর ও আকর্ষণীয় চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম –
কিভাবে সিভি লিখতে হয়?
অনেকেই মনে করেন, সিভি বড় হলে ভালো। কিন্তু এ ধারণা ভুল। বরং সিভিতে অল্প কথায় নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে হয়। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, নিয়োগকারীরা একটি সিভি দেখতে এক মিনিটের কম সময় ব্যয় করেন। সিভি দেখার পর একজন প্রার্থীকে তিনটি কারণে সাক্ষাৎকারে ডাকা হয় না। কারণ তিনটি হলো—গতানুগতিক ধরনের সিভি, ভুল বানান ও মিথ্যা তথ্য।
নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা
সিভির শুরুতে নিজের নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা থাকা প্রয়োজন। ‘কারিকুলাম ভিটা’ বা ‘সিভি’ দিয়ে শিরোনাম করা ঠিক না। নিজের নামেও শিরোনাম করা যেতে পারে। যোগাযোগের ঠিকানা স্পষ্ট করে লিখতে হবে। ই-মেইল ও মুঠোফোন নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক। এই অংশে লিংকডইন প্রোফাইলের লিংক যোগ করা যায়। তবে তথ্য যেন হালনাগাদ থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
আকর্ষণীয় বাংলা সিভি লেখার কৌশল
সম্প্রতি তোলা ঝকঝকে ছবি ব্যবহার করাটা গুরুত্বপূর্ণ। ফেসবুক বা অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহার করা ছবি দেওয়া যাবে না। ছবিটি হতে হবে পাসপোর্ট সাইজের।
ব্যক্তিগত প্রোফাইল
সিভির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্যক্তিগত প্রোফাইল। আপনার কর্মজীবনের লক্ষ্য এবং আপনি প্রতিষ্ঠানকে কী দিতে পারবেন, তা কয়েক লাইনে লিখতে হবে। আপনার ব্যক্তিগত বক্তব্য যেন সংক্ষিপ্ত এবং আকর্ষণীয় হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। এ অংশে বেশি বাক্য ব্যবহার করা অনুচিত।
পেশাগত অভিজ্ঞতা
অতীতের চাকরি, ইন্টার্নশিপ এবং কাজের অভিজ্ঞতা যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে। কোথায় কোথায় চাকরি করেছেন, তা ক্রমানুসারে লিখতে হবে। সদ্য স্নাতক পাস করা হলে ইন্টার্নশিপ করা প্রতিষ্ঠানের তথ্য তুলে দরতে হবে। চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে সর্বশেষ যেখানে চাকরি করেছেন, সেটি লিখে বাকি প্রতিষ্ঠানের নামগুলো পর্যায়ক্রমে লিখুন। প্রতিষ্ঠানের নাম, সেখানে আপনার কাজের বিবরণ এবং আপনার অর্জন লিখতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠানে কতো দিন কাজ করেছেন, সেটিও উল্লেখ করুন।
আকর্ষণীয় বায়োডাটা লেখার নিয়ম জানুন
শিক্ষাগত যোগ্যতা
পেশাগত অভিজ্ঞতা অংশের মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা লেখার ক্ষেত্রে আপনার সর্বশেষ ডিগ্রি যে প্রতিষ্ঠান থেকে, সেটি দিয়ে শুরু করে ক্রমানুসারে মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের নাম লিখতে হবে। প্রতিষ্ঠানের পাশে পাস করার সাল এবং জিপিএ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল না পেয়ে থাকলে ‘অ্যাপিয়ার্ড’ লেখা যেতে পারে।
প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা
যারা সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন, তাদের জন্য এই অংশ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাদের পূর্ববর্তী কোনো চাকরি করার অভিজ্ঞতা নেই। যিনি সদ্য স্নাতক প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার তথ্যাদি বেশি সিভিতে যুক্ত করতে পারবেন, তিনি বাকিদের চেয়ে তত এগিয়ে থাকবেন। প্রশিক্ষণ ও কর্মশালাগুলো লেখার ক্ষেত্রে বিষয়, তারিখ ও স্থান উল্লেখ করতে হবে।
আকর্ষণীয় শখ
অকাম্য ও অনভিপ্রেত শখ যোগ করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ, এগুলো বলে দেবে আপনি ব্যক্তি হিসেবে কেমন। বরং এমন কিছু শখের কথা সিভিতে জানান, যা আপনার নিষ্ঠা ও একাগ্রতা তুলে ধরবে।
ভাষা দক্ষতা
দেশে চাকরির জন্য বাংলা ও ইংরেজি জানা আবশ্যক। প্রমিত বাংলা ভাষা শেখার কোনো কোর্স করে থাকলে তা উল্লেখ করতে পারেন। আর ইংরেজি ভাষা দক্ষতার ক্ষেত্রে আইইএলটিএস, টোয়েফল ও পিটিই পরীক্ষায় অংশ নিলে তার স্কোর লিখুন। এ ছাড়া অন্য কোনো ভাষা জানা থাকলে সেটিও উল্লেখ করুন।
কম্পিউটার দক্ষতা
বর্তমানে প্রায় সব চাকরির জন্য কম্পিউটার দক্ষতা আবশ্যক। সাধারণত মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ার পয়েন্ট জানা বাধ্যতামূলক ধরা হয়। এ ছাড়া ফটোশপ বা ভিডিও এডিটিং জানা থাকলে সেটি উল্লেখ করা যেতে পারে। এ বিষয়ে কোথাও প্রশিক্ষণ নিলে সাল–তারিখসহ উল্লেখ করুন।
রেফারেন্স
প্রার্থীর পরিচিত যেকোনো পেশার ব্যক্তির নাম রেফারেন্স হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। তবে সদ্য স্নাতকেরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের রেফারেন্স হিসেবে দিতে পারেন। যার রেফারেন্স দেবেন, অবশ্যই তার অনুমতি নিতে হবে। তার নাম, ফোন নম্বর, ই-মেইল ও তার প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করতে হবে।
অঙ্গীকারনামা
সিভিতে কোনো ক্রমেই মিথ্যা কিংবা ভুল তথ্য প্রদান করা যাবে না। অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করতে হবে, আপনার সব তথ্য সঠিক ও নির্ভুল। লেখার নিচে আপনার স্বাক্ষর থাকতে হবে। আপনি যেসব অভিজ্ঞতা সিভিতে তুলে ধরবেন, সেগুলো আবেদন করা চাকরির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কাজের বিবরণ দেখুন এবং মিলিয়ে নিন সেগুলো আপনার অভিজ্ঞতার সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ। এরপর শতভাগ নিশ্চিত হয়ে সিভি পাঠিয়ে দিন।
যেসব বিষয় মনে রাখবেন
টাইমস নিউ রোমান, অ্যারিয়্যাল বা ভারদানা ফন্ট ব্যবহার করতে পারেন। ফন্ট সাইজ ১১–এর কম হওয়া যাবে না। মাঝেমধ্যে বোল্ড এবং হেডার অপশনও ব্যবহার করুন। তবে অবশ্যই কালো রঙ ব্যবহার করতে হবে।
পরিশ্রমী, মনোযোগী, উৎসাহী—এ ধরনের বিশেষণগুলো এড়িয়ে চলুন। এর পরিবর্তে কিছু অর্থবহ শব্দ ব্যবহার করুন। যেমন জবাবদিহি, লক্ষ্য ও অর্জন।
নিয়োগকারীরা আপনাকে ভুলের ওপর বিচার করবে। সেটা হতে পারে বানানের ভুল, সিভির কাঠামোর ভুল অথবা বিরামচিহ্নের ক্ষেত্রে। তাই সিভি লেখার সময় সতর্ক থাকুন। কম্পিউটারে লিখলে স্বয়ংক্রিয় সংশোধন অপশন ব্যবহার করুন। সিভি তৈরি করার পর ভুল এড়াতে আরেকজনকে দিয়ে পড়িয়ে নিন।
সিভি সংক্ষিপ্ত রাখুন, তবে ছোট করতে গিয়ে অভিজ্ঞতা মুছে ফেলা যাবে না। গতানুগতিক নিয়মে দুই পৃষ্ঠায় সিভি শেষ করতে বলা হয়। আপনি কোন ধরনের চাকরিতে আবেদন করছেন, তার ওপর পৃষ্ঠা বাড়তেও পারে। তবে দুই পৃষ্ঠার সিভি দেখলে নিয়োগকর্তারা সাধারণত খুশি হন। তাই আকর্ষণীয় একটি সিভি লিখার কৌশল আপনার প্রত্যাশিত চাকরি পেতে অনেক বেশি সহায়ক হবে। সময় নিয়ে ভালো সিভি তৈরি করুন যা পরবর্তীতে হু হুতাশ করতে না হয়।